গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার ১১ টি উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই অবগত নন। গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ের খাবার শুধু মায়ের শরীরকে নয়, শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশকেও প্রভাবিত করে।
তাই খাদ্যতালিকায় পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার যুক্ত করা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে কাঠবাদাম অন্যতম। এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন ই, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ একটি সুপারফুড।তাই গর্ভাবস্থায় খাদ্য তালিকায় অবশ্যই কাঠবাদাম রাখতে হবে।
পেজ সূচিপত্র : গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
- শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে
- গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়
- রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে
- হাড় ও দাঁত মজবুত করে
- হৃদপিণ্ডকে দীর্ঘ মেয়াদে সুরক্ষা দেয়
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়
- হজমের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়
- ত্বক ও চুলের যত্নে সহায়তা করে
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
- শেষ কথা | গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টির চাহিদা দেখা দেয়। কাঠবাদাম প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিতে ভরপুর যা এই চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ বাদাম খাওয়া মায়ের শরীরে শক্তি যোগায়। মায়ের শরীরে গর্ভাবস্থায় যে দুর্বলতা দেখা দেয় তা কাঠবাদাম খাদ্য তালিকায় রাখার ফলে অনেকটায় কমে যায়। এছাড়া কাঠবাদাম শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
এটি প্রাকৃতিক একটি খাবার যা সহজলভ্য এবং কৃত্রিম ভিটামিনের বিকল্প হিসেবে কার্যকর। ফলে গর্ভবতী মা সুস্থ থাকেন এবং ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি ঘটে। গর্ভাবস্থায় প্রাকৃতিক খাবারের কোনো বিকল্প নেই। এই সময় যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক খাবারে মনোনিবেশ করা উচিত। গর্ভাবস্থায় প্রাকৃতিক খাবারের সেরা উৎস হতে পারে কাঠবাদাম,যা বেশ সহজে সংগ্রহ করা যায়। তাই গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবশ্যই আপনাকে সঠিক ধারণা রাখতে হবে।
শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে
একটি শিশুর গঠন কেমন হবে বা জন্মের পর তার স্বাস্থ্য কেমন হবে তা নির্ভর করে-গর্ভে থাকা অবস্থায় মায়ের খাদ্যাভ্যাস কেমন ছিল তার উপর। কাঠবাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কোষ সুরক্ষায় সহায়তা করে। তাই শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে মা কে গর্ভাবস্থায় কাঠবাদাম খাওয়ানোর বিকল্প নেই।
নিয়মিত বাদাম খাওয়া আপনার শিশুর স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সহায়ক হতে পারে। মায়ের খাদ্যাভ্যাস শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। প্রত্যেক বাবা-মা চায় তার সন্তান সুস্থ স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীতে আসুক। সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পূর্বেই বাবা মায়ের সপ্ন দেখা শুরু হয়ে যায়। তাই সন্তানের মানসিক বিকাশ এবং শারীরিক বলিষ্ঠতার জন্য অবশ্যই মাকে এই সময় কাঠবাদাম খেতে দিবেন।
গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়
গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো,এই সময় এটি প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়। গর্ভাবস্থায় মায়েদের প্রায়শই ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয়। কাঠবাদামের প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরকে দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করে। এতে করে একজন মা তার সারাদিনের কাজ করার শক্তি পায়। গর্ভাবস্থায় একজন মা বেশ কিছু শারীরিক জটিলতার মধ্যে দিয়ে যান। কাঠবাদাম হতে পারে সেই সব জটিলতার উপশমকারী।
চিনি জাতীয় খাবারের পরিবর্তে বাদাম খাওয়া এনার্জি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে মা সারাদিন স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারেন।মায়েদের জন্য সারাদিন বিশ্রাম নেয়া প্রায় অসম্ভব বলা চলে। কারন একটি সংসারের প্রায় পুরো দায়িত্ব একজন মায়ের উপরেই থাকে। তাই একজন মাকে সারিরিকভাবে সুস্থ থাকা জরুরী। আর এই জরুরী কাজে টনিকের মত কাজ করে কাঠবাদাম।
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে
গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো-অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা। গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর অ্যানিমিয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার ফলে একজন মা মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কাঠবাদামে থাকা আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর।গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করাটা কাঠবাদামের একটি বিশেষ ক্ষমতা বলা যায়।
গর্ভাবস্থায় জরুরী বিষয় হলো মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত যেন থাকে তা নিশ্চিত করা। শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত থাকলে শিশুর অক্সিজেন সরবরাহ ভালো হয়। শিশুর অক্সিজেন সরবরাহ ভালো না হলে একটি শিশু মৃত্যু ঝুকিসহ নানাবিধ জতিলতায় পড়তে পারে। তাই মা ও শিশু উভয়েই যেন সুস্থ থাকে এবং গর্ভকালীন জটিলতা যেন অনেকাংশেই কমে যায় তা নিশ্চিত করতে কাঠবাদাম খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
হাড় ও দাঁত মজবুত করে
হাড় ও দাঁত আমাদের শরীরের বেশ কার্যকরী অংশ। এগুলো দুর্বল হলে আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয়। কাঠবাদামে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এই খনিজ উপাদানগুলো আমাদের শরীরের শক্তিশালী অংশ হাড় মজবুত রাখতে ও হাড়ের শক্তিশালী গঠনে সহায়তা করে। এছাড়া এই উপাদানগুলো দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। মা ও শিশুর হাড়ের গঠন এবং দাঁতের দৃঢ়তা বাড়ানোর জন্য মায়ের গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনস্বীকার্য।
শিশুর হাড় মজবুতভাবে গঠিত হলে ভবিষ্যতে তার স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অপরদিকে হাড় মজবুত না হলে বিকলাঙ্গ বা দুর্বল শিশু জন্ম নেবার সম্ভাবনা থাকে। এই আশঙ্কা আমরা কমিয়া আনতে বা দূর করতে পারি গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্য তালিকায় কাঠ বাদাম রেখে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়েরও হাড় দুর্বল হওয়ার ঝুঁকিও থেকে যায়। এই ঝুঁকি এড়ানোও আমার আপনার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
হৃদপিণ্ডকে দীর্ঘ মেয়াদে সুরক্ষা দেয়
কাঠ বাদাম ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমৃদ্ধ যা হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা উন্নত করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত কাঠ বাদাম খেলে আপনার রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। ফলে মায়ের হৃদপিণ্ড দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষিত থাকবে এবং ভবিষ্যতে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
গর্ভকালীন সময়ে কাঠ বাদাম খাওয়ার অভ্যাস কেবল মায়ের জন্যই নয়, সন্তানের জন্যও উপকারী। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান আপনার শিশুর হৃদপিণ্ডের গঠনকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। একইসাথে রক্তে প্রদাহজনিত সমস্যা কমিয়ে হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখবে। কাঠ বাদামে থাকা পটাশিয়াম হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে, যা গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই জরুরি। এভাবে কাঠ বাদাম দীর্ঘ মেয়াদে হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতায় এবার দেখব এটি ওজন কী করে নিয়ন্ত্রণ করে। কাঠ বাদাম প্রোটিন ও ফাইবারে ভরপুর হওয়ায় এটি দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা অনেক সময় ওজন বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু কাঠ বাদাম সেই ঝুঁকি কমায়। এতে ক্যালোরি তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। নিয়মিত কাঠ বাদাম খেলে অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
এছাড়া কাঠ বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এটি মায়ের শরীরে অপ্রয়োজনীয় চর্বি জমতে দেয় না, বরং ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কাঠ বাদাম খেলে গর্ভাবস্থায় ওজন হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। সঠিক পরিমাণে কাঠ বাদাম খাওয়ার মাধ্যমে মা সুস্থ থাকতে পারেন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়
কাঠ বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার ও প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিয়মিত কাঠ বাদাম খেলে রক্তে গ্লুকোজ শোষণ ধীরে হয়, ফলে হঠাৎ করে শর্করা বেড়ে যায় না। এতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত হয় এবং শরীর ভারসাম্য বজায় রাখে।
এছাড়া কাঠ বাদামে ম্যাগনেশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, যারা নিয়মিত কাঠ বাদাম খান, তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। তাই গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা শুধু মায়ের নয়, এতে ভবিষ্যতে শিশুর ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাঠ বাদাম অন্তর্ভুক্ত করা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী।
হজমের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে
গর্ভাবস্থায় হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। কাঠ বাদাম ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং খাদ্যকে দ্রুত ভাঙতে সহায়তা করে। নিয়মিত কাঠ বাদাম খেলে অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি হয়, যা পেট পরিষ্কার রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস ও অস্বস্তি অনেকটাই কমে যায়।তাই আমরা বলতে পারি, হজমের সমস্যা সমাধানে গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
এছাড়া কাঠ বাদামে থাকা প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে শক্তি জোগায়, যা হজম প্রক্রিয়াকে আরও সক্রিয় করে। গর্ভবতী মায়েরা যদি অল্প পরিমাণে নিয়মিত কাঠ বাদাম খান, তবে হজমের সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়। এটি পাকস্থলীতে অস্বস্তি সৃষ্টি না করে পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়। ফলে গর্ভাবস্থায় সুস্থ হজম প্রক্রিয়া বজায় রাখতে কাঠ বাদাম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়
গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখা খুব জরুরি, কারণ এই সময়ে মায়ের শরীর তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। কাঠ বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, জিঙ্ক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে। নিয়মিত কাঠ বাদাম খেলে সংক্রমণ ও বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া এটি শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিক্যাল দূর করে কোষকে সুস্থ রাখে।
শুধু তাই নয়, কাঠ বাদামে থাকা প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট মায়ের শরীরকে শক্তি জোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও মজবুত করে। এতে গর্ভবতী নারী সহজে ক্লান্ত হন না এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হন। একই সঙ্গে শিশুরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঠ বাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা পেতে হলে সুস্থ মা ও সুস্থ শিশুর জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাঠ বাদাম রাখা অত্যন্ত উপকারী।
ত্বক ও চুলের যত্নে সহায়তা করে
গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনজনিত কারণে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারেঃযেমন শুষ্কতা, রুক্ষভাব বা অনুজ্জ্বল ত্বক। কাঠবাদামে থাকা ভিটামিন-ই ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায় এবং প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখে। এটি ত্বককে ফ্রি-র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, ফলে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়ে না। কাঠবাদামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা ও কোমলতা বাড়াতে সহায়ক। নিয়মিত খেলে ত্বক হয় মসৃণ, দাগ কমে আসে এবং স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরে পায়। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ত্বকের শুষ্কতা দূর করে দীর্ঘ সময় আর্দ্র রাখে। সব মিলিয়ে গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতায় এটি ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চুলের সুস্থতা বজায় রাখতেও কাঠবাদাম অত্যন্ত কার্যকর একটি খাবার। এতে থাকা বায়োটিন, প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের গোড়া শক্তিশালী করে এবং ভাঙা ও পড়া রোধ করে। গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েদের চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, কাঠবাদাম নিয়মিত খেলে এই সমস্যা অনেকটা কমে। এতে থাকা খনিজ উপাদান যেমন ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক চুলের দ্রুত বৃদ্ধি এবং ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। কাঠবাদামের তেল চুলে ব্যবহার করলে চুল হয় আরও নরম, উজ্জ্বল ও মজবুত। এছাড়া এটি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। সব দিক থেকে কাঠবাদাম গর্ভাবস্থায় চুলের যত্নে একটি প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে কাজ করে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা মন খারাপ দেখা দেয়। কাঠবাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন-ই মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও ডোপামিন উৎপাদনকে সমর্থন করে, যা মেজাজ উন্নত করতে সহায়ক। নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক চাপ কমে আসে। এর মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম নার্ভ সিস্টেমকে শান্ত রাখে।
গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে রয়েছে,এতি অতিরিক্ত উদ্বেগ ও অবসাদ প্রতিরোধে একটি প্রাকৃতিক সহায়ক। এটি ঘুমের মান উন্নত করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাঠবাদামের নিয়মিত সেবন মনকে সতেজ ও সতর্ক রাখে, একাগ্রতা বাড়ায়। ফলে গর্ভবতী মা মানসিকভাবে আরও স্থিতিশীল ও শান্ত অনুভব করে। মানসিক চাপ কম থাকলে শরীরও সুস্থ থাকে, যা গর্ভাবস্থার জন্য উপকারী।
শেষ কথা | গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কাঠবাদাম খাওয়া মা ও গর্ভের শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ভিটামিন গর্ভবতী নারীর শরীরকে শক্তি জোগায় এবং শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে। এটি যেমন মায়ের হাড় ও দাঁতকে মজবুত রাখে, তেমনি শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে আরও নানবিধ উপশম রয়েছে।
তবে খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতি মেনে চলা জরুরি। অতিরিক্ত কাঠবাদাম খেলে হজমের সমস্যা বা অ্যালার্জির ঝুঁকি হতে পারে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে বাদাম খাওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম। সঠিক পরিমাণে কাঠবাদাম খাওয়া গর্ভাবস্থাকে আরও স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ করে তুলতে পারে। গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা পরিপূর্ণভাবে পেতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ এবং নিজের সচেতনতা কাজে লাগিয়ে এটি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
নেটপিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url